মিলের পরীক্ষামূলক পদ্ধতি | দ্বাদশ শ্রেণি দর্শন নোটস PDF | ClassGhar |

 মিলের পরীক্ষামূলক
পদ্ধতি
দ্বাদশ শ্রেণি দর্শন নোটস PDF। 
মিলের পরীক্ষামূলক পদ্ধতি সংজ্ঞা, আকার, দৃষ্টান্ত, সুবিধা, অসুবিধা বিস্তারিত আলোচনা।



 মিলের পরীক্ষামূলক পদ্ধতি

দৃষ্টান্ত সহকারে
মিলের অন্বয়ী পদ্ধতি ব্যাখ্যা ও বিচার করো। (সংজ্ঞা, আকার, দৃষ্টান্ত, সুবিধা 2টি,
অসুবিধা 2 টি)

ভূমিকা- 

        আমরা জানি, এই জগত বড়ই জটিল। এখানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে
বিভিন্ন ঘটনা ঘটে চলেছে। আর সেই বিভিন্ন ঘটনাগুলি কার্যকারণ সম্বন্ধযুক্ত। কিন্তু কোন
কারণে প্রকৃতির বুকে কোন ঘটনা ঘটছে আমরা সাধারন মানুষ তা সহজেই অনুমান করতে পারি না।
তাই এর সহায়ক রূপে যুক্তি বিজ্ঞানী মিল যে পাঁচটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন তার এক অন্যতম
রূপে অন্বয়ী পদ্ধতিটি নিম্নে আলোচনা করা হল।

সংজ্ঞা- 

        প্রসিদ্ধ যুক্তি বিজ্ঞানী জন স্টুয়ার্ট মিল তার সুবিখ্যাত
“A System of logic”গ্রন্থে এই পদ্ধতির সূত্রে বলেছেন-
 “আলোচ্য ঘটনাটি উপস্থিত আছে এমন দুই বা ততোধিক দৃষ্টান্তে যদি একটি
মাত্র ঘটনা সব দৃষ্টান্তে সমানভাবে উপস্থিত থাকে এবং অন্যান্য ঘটনাগুলিতে মিল না থাকে,
তাহলে সেই সাধারণ ঘটনাটি সব দৃষ্টান্তে উপস্থিত থাকায় -সেটিকে আলোচ্য ঘটনার কারণ বা
কার্য বলা যায়”।

■ অপসারণ নীতি- মিল এই পদ্ধতির অপসারণ সূত্রে বলেছেন- যে পূর্ববর্তী ঘটনাকে
বর্জন করলে কার্য নির্ণয়ে কোন ক্ষতি হয় না, সেই ঘটনাটি আলোচ্য ঘটনার কারণ বা কারণের
অংশ হতে পারে না।


সাংকেতিক আকার- মিল এই পদ্ধতিকে সাংকেতিক আকারে যেভাবে
প্রকাশ করেছেন সেটি নিম্নরূপ-

 পূর্ববর্তী ঘটনা
(কারণ)
   পরবর্তী ঘটনা(কার্য)

ABC                                   abc

ACD                                   acd

ADE                                   ade

 

* ‘A’  হলো  ‘a’ -র কারণ কিংবা

‘a’ হলো  ‘A’-র কার্য।

 


ব্যাখ্যা- 

উক্ত দৃষ্টান্তে দেখা যায় পূর্ববর্তী ঘটনা
রূপে ABCD কারণে abcd কার্য গুলি ঘটেছে। কিন্তু উক্ত দৃষ্টান্তগুলিতে দেখা যায়
‘A’ নামক পূর্ববর্তী ঘটনাটি সব দৃষ্টান্তে সমানভাবে উপস্থিত আছে। সেইসঙ্গে কার্যরূপে
‘a’ ঘটনাটিও সর্বত্র সমান উপস্থিত আছে। তাছাড়া
 BCDE নামক ঘটনাগুলি
উভয় ক্ষেত্রে সমানভাবে উপস্থিত না থাকায় অনুমান করা হল যে A এবং a-র মধ্যে কার্যকারণ
সম্পর্ক আছে।

বাস্তব দৃষ্টান্ত

কার্য থেকে কারণ

      পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ)

1. অ্যানোফিলিস
মশার দংশন, ধূমপান, দারিদ্র

2. অ্যানোফিলিস
মশার দংশন, আবর্জনা, অধিক রাত জাগা

3. নোংরা বাসস্থান,
নোংরা পোশাক,নালা- নর্দমা,

অ্যানোফিলিস মশার
দংশন

পরবর্তী ঘটনা
(কার্য)

1. রামের ম্যালেরিয়া

2. শ্যামের ম্যালেরিয়া

3. যদুর ম্যালেরিয়া

* অ্যানোফিলিস  মশার দংশন হল ম্যালেরিয়া রোগের কারণ।


ব্যাখ্যা- 

উক্ত দৃষ্টান্ত থেকে বোঝা যায় সব দৃষ্টান্তে
দারিদ্র্য, আবর্জনা, নোংরা পোশাক ইত্যাদি ঘটনাগুলি সমানভাবে উপস্থিত না থাকলেও অ্যানোফিলিস
মশার দংশন ঘটনাটি সব দৃষ্টান্তে সমানভাবে উপস্থিত থাকায় এবং এদের প্রত্যেকের ম্যালেরিয়া
হওয়ায় অনুমান করা হল যে- অ্যানোফিলিস মশার দংশন হল ম্যালেরিয়ার কারণ।

 কারণ থেকে কার্য

পূর্ববর্তী ঘটনা
(কারণ)

1. রাম বাড়িতে
কীটনাশক ওষুধ ছড়াল

2. শ্যাম বাড়িতে
কীটনাশক ওষুধ ছড়াল।

3. যদু বাড়িতে
কীটনাশক ওষুধ ছড়াল।

পরবর্তী ঘটনা
(কার্য)

1. ছেলেটির জ্বর
হলো, ইঁদুর মারা গেল।

2. বিড়াল পালালো,
পাখি ডাকলো, ইঁদুর মারা গেল।

3. গাছে ফুল ফুটল,
মেয়ে পরীক্ষায় পাশ করলো, ইঁদুর মারা গেল।

    কীটনাশক ওষুধ
ছড়ানোই হল ইঁদুর মরার কারণ। উক্ত দৃষ্টান্ত থেকে বোঝা যায় পরবর্তী ঘটনাগুলির সব গুলির
মধ্যে
 ‘ইঁদুর মরে যাওয়া’ ঘটনাটি সর্বত্র সমান ভাবে উপস্থিত থাকায় এবং পূর্ববর্তী
ঘটনা রূপে কীটনাশক ওষুধ দেওয়ার ঘটনায় মিল থাকায় অনুমান করা হল যে -কীটনাশক ওষুধ
দেওয়াই ইঁদুর মরার কারণ।


সুবিধা

1. প্রয়োগ ক্ষেত্র-
এই পদ্ধতি খুবই সহজ সরল এবং এর প্রয়োগ ক্ষেত্র অনেক ব্যাপক। কারণ এই পদ্ধতি পর্যবেক্ষণমূলক
হওয়ায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনাগুলির কারণ থেকে কার্য এবং কার্য থেকে
কারণ অনুসন্ধান করা খুবই সহজ হয়।

2. প্রকল্প গঠন-
এই পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ নির্ভর হলেও কার্যকারণ সম্বন্ধ বিষয়ে প্রকল্প গঠন করে বৈজ্ঞানিক
গবেষণা ও অনুসন্ধানে অনেক সাহায্য করে।

অসুবিধা

1. বহু কারণের
সম্ভাবনা-
এই পদ্ধতির প্রকৃতিগত ত্রুটি হল বহু কারণ এর সম্ভাবনা। কারণ বহু কারণ বাদ
অনুসারে একটি কার্যের একাধিক কারণ থাকে। কিন্তু অন্বয়ী পদ্ধতি দুটি ঘটনার বিভিন্ন
ক্ষেত্রে উপস্থিতির মিল দেখে তাদের কার্যকারণ সম্বন্ধ আবিষ্কার করে। তাই একটি কার্যের
যদি একাধিক কারণ থাকে সেখানে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় না।

ব্যবহারিক দোষ- এই পদ্ধতির অন্যতম ত্রুটি হল ব্যবহারিক দোষ। কারণ এই পদ্ধতি
যেহেতু পর্যবেক্ষণমূলক, তাই অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত কারণটি আমাদের চোখের নাও পড়তে পারে।
যেমন- একজন কবিরাজ চার জন রোগীকে চার রকমের ওষুধ দিয়ে প্রত্যেককে মধুর সঙ্গে খেতে
বললেন। দেখা গেল রোগীরা তা খেয়ে রোগ মুক্ত হলো।

            এখন অন্বয়ী পদ্ধতি
প্রয়োগ করে যদি সিদ্ধান্ত করা হয় “মধুই রোগ মুক্তির কারণ” তাহলে ভুল হবে।



Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now
Scroll to Top